সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

আজ কের আটিকেল থেকে জানব সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি এবং সমন্বিত চাষের ধারণা সম্পর্কে বিস্তারিত । জমিতে আগাছা মাছের চলাচল জন্মাতে বাধা দেয় এবং ক্ষতিকারক ধানের পোকামাকড় এই মাছ খেয়ে ফেলে । একই সময়ে একই জমিতে একাধিক ফসল তৈরী করা হয় এভাবে যখন ফসল চাষ করা হয় সমন্বিত চাষ বলে ।
সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি এবং সমন্বিত চাষের ধারণা সম্পর্কে জানুন

সমন্বিত চাষের ধারণা এবং সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন ও অন্য ফসলের চাষ করা হয় সমন্বিত চাষে তখন মাছের সাথে একটা জমিতে একটাই ফসল একই সময়ে কম খরচে অনেক ফসল পাওয়া যায় তাকে সমন্বিত মাছ চাষ বলে ।

সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের গ্রামের প্রায় বাড়িতেই হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন করা হয়। সমন্বিত চাষের ধারণা এবং সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি আবার সে সাথে অনেকের বাড়িতে রয়েছে পুকুর যেটি খোয়ামোছা, বস্ত্রাবস্থা, গোসল ইত্যাদি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত হয়। সনাতন পদ্ধতিতে এই সব পুকুরে মাছও লালন করা হয়। এসব হাঁস-মুরগি, মাছ পরিবারের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে।

পুকুরের উপর ঘর করে যনি হাঁস-মুরগি রাখা যায় তবে এসের জন্য অতিরিক্ত জায়গার দরকার হয় না। আবার গরুর গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা পুকুরে সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। সেইসাথে হাঁস-মুরগির উচ্ছিষ্ট খাদ্য পুকুরে ফেলে দিলে তা মাছের সম্পূরক খাদ্যের যোগান দেয়।

অব্যবহৃত পুকুরের পাড়ে ফল-মূল এবং শাকসবজির চাষও করা যায় যেখানে পুকুরের তলার অতিরিক্ত কাদা (পচা জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ) সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে ফলমূল ও শাকসবজির খরাপাতা কমপোস্ট সার হিসাবে পুকুরে ব্যবহার করা হয়। আবার কৃষকের ধানের জমিতে যে কয়েকমাস পানি থাকে সে সময়ে ধানের পাশাপাশি উৎপাদন করা সম্ভব।

এই মাছ ধানের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে এবং মাছের চলাচল জমিতে আগাছা জন্মাতে বাধা দেয়। এভাবে যখন একই জমিতে একই সময়ে একাধিক ফসল উৎপাদন করা হয় তাকে সমন্বিত চাষ বলে। সমন্বিত চাষে যখন মাছের সাথে অন্য ফসলের চাষ করা হয় তখন তাকে সমন্বিত মাছ চাষ বলে।

সমন্বিত চাষের গুরুত্ব

এক জমিতে এক সময়ে কম খরচে অনেক ফসল পাওয়া যায়। ফলে বাড়তি খাদ্য তৈরী হয়। একই ফসল অপর ফসলের সহায়ক হিসাবে কাজ করে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। সার ব্যবহারের খরচ কমে। শ্রমের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয় (একটি ফসলের জন্য যে শ্রম প্রয়োজন, সেই একই, প্রমে একাধিক ফসল উৎপাদিত হয়।

সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয় ও অপচয় রোধ হয়। ঝুঁকি কম থাকে অর্থাৎ কোনো কারণে একটি ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হলে অন্য ফসল উৎপাদন কার্যক্রমের মাধ্যমে সে ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া যায়।


নিচে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সমন্বিত মাছের চাষ ও পদ্ধতি (সমন্বিত মাছ এবং হাঁস/মুরগি চাষ ও ধানক্ষেতে মাছ আর গলদা চিংড়ি চাষ) সম্পর্কে জানতে পারবেন ।

সমন্বিত মাছ ও হাঁস/মুরগি চাষ

মাছ ও হাঁস এবং মুরগির সমন্বিত চাষের সুবিধা সম্পরকে জানুন

  • ১. পুকুরের উপর হাঁস/মুরগির ঘর তৈরি করা হয় বলে আলাদা জায়গার প্রয়োজন হয় না। 
  • ২. হাঁস/মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি পুকুরে পড়ে যা মাছ চাষের জন্য উৎকৃষ্ট জৈব সার, এই পদ্ধতিতে পুকুরে বাইরে থেকে কোনো সার দেওয়ার দরকার নেই।
  • ৩. হাঁস/মুরগির উচ্ছিষ্ট খাদ্য সরাসরি পুকুরে পড়ে যা মাছ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে ফলে মাছের জন্য আলাদা কোনো সম্পূরক খাদ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
  • ৪. হাঁস পুকুরের পোকামাকড় ও ব্যাঙটি খেয়ে পুকুরের পরিবেশ ভালো রাখে।
  • ৫. হাঁস পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটে বলে বাতাস থেকে অক্সিজেন পানিতে মেশে ফলে পানিতে অক্সিজেনের সমস্যা হয় না।
  • ৬. একই জায়গা থেকে মাছ, মাংস ও ডিম পাওয়া যায় ফলে অধিক খাদ্য উৎপাদন ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি। খুব ছোট আকারের পুকুর সমন্বিত মাছ ও হাঁস/মুরগি চাষের জন্য তেমন উপযোগী নয়। পুকুরের আয়তন ন্যূনতম ৩৩ শতক হলে ভালো হয়। বছরে কমপক্ষে ৮-১০ মাস ১.২ থেকে ১.৮ মিটার (৪-৬ ফুট) পানি থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে।

এরপর যথাযথ নিয়মে মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুত করে নিয়ে হবে। তবে সমন্বিত হাঁস-মুরগিও মায়ের প্রস্তুতিকালীন সময়ে সার প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। চুন দেওয়ার ৭দিন পর পুজুরের উপর বানানো ঘরে হাঁস/মুরগির বাতা মজুদ করতে হবে। হাঁস/মুরগির বাক্সা মজুদের ৭-১০ দিন পর পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে।

হাঁস-মুরগির ঘর নির্মাণ

খরজায় বাঁশ, কাঠ ও হন নিয়ে এক চালা বা দো-ভালা ঘর তৈরি করা যায়। ঘরপাড় থেকে ১.২ থেকে ১.৫ মিটার (৪-৫ ফুট) ভিতরে পানির উপর হবে যেন শুকনো মৌসুমে পানি কমে গেলেও বিষ্ঠা ও উল্লির খাদ্য ঘাটতে না পড়ে পানিতে পড়ে। পানির উপরিভাগ থেকে ঘরের মেঝের দূরত্ব ০.৪৬-০.৬ মিটার (১.৫-২ফুট) এবং মেঝে থেকে ঘরের চালার উচ্চতা হবে ১.২-১.৫ মিটার (৪-৫ ফুট)।

ঘরের ভিতরে পর্যাপ্ত ঘরের বেড়ার মাধের জালের মতো বেড়া বা জাল দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। ঘরের মেঝে বাঁশের বাতা দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। এক যাতা থেকে জন্য বাতার দূরত্ব হবে ১ সেমি। এতে করে মুরগির বিষ্ঠা ও উর্মির সরাসরি পানিতে পড়বে কিন্তু মুরগির পা বাতার ফাকে ঢুকে আঘাত প্রাপ্ত হবে না।

হাঁস-মুরগির জাত ও সংখ্যা নির্ধারণ। প্রতি শতাংশ পুকুরের জন্য উন্নতজাতের ২টি হাঁস বা মুরগি ব্রেয়লার বা লেয়ার) পালন করা যায়।

হাঁস-মুরগির খস্য

হতা অবস্থায় ৯০ দিন পর্যন্ত প্রতিটি হাঁসের জন্য প্রতিদিন ৬০-৯০ গ্রাম এবং পরবর্তীতে ১১০-১২৫ গ্রাম সুষম খাদ্য দিতে হবে। হাঁসকে খাদ্য খাওয়ানোর সময় প্রয়োজনমতো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। ব্রয়লার মুরগিকে প্রয়োজন অনুযায়ী সব সময় খাবার প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। খাবার প্রদান করতে হবে। খাদ্য ও পানি খাওয়ানোর জন্য পৃথক পৃথক পাত্র ব্যবহার করতে হবে।

হাঁস-মুরগির রোগবালাই দমন

হাঁস এবং মুরগির রোগ হতে পারে। রোগ হলে রোগ প্রতিরোধের নিকটস্থ পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য মুরগির ঘর সবসময় শুকনো রাখতে হবে। ঘরের মেঝে এবং খাদ্য ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত টিকা ও ইনজেকশন দিতে হবে। অসুস্থ হাঁস-মুরগিকে যতদ্রুত সম্ভব ভালোগুলোর কাছ থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।

মাছের প্রজাতি নির্বাচন ও মজুদ ঘনত্ব

পুকুরে ৮-১২ সেমি আকারের বিভিন্ন কার্পজাতীয় মাছের পোনা শতক প্রতি ৩৫-৪০টি নিম্নলিখিত অনুপাতে ছাড়া যায় তার মধ্যে শতক প্রতি কাতলা, বিগহেড ৪টি, সিলভার কার্প ৯টি, তুই ৮টি, দৃগেল ও কার্ণিও ৪টি করে, গ্রাস কার্প ১টি এবং সরপুঁটি ৫-১০টি ছাড়তে হবে।

গ্রাসকার্প ঘাসজাতীয় খাদ্য খায়

তাই পুকুর পাড়ে জমানো খাস, নরম পাতা, কলা পাতা ইত্যাদি নিয়মিত পুকুরে দিতে হবে।  খাদ্য দেওয়ার দরকার নেই  অন্য জাতের মাছের জন্য । পানিতে পড়া হাঁস/মুরগির উচ্ছিষ্ট খাদ্যই এরা গ্রহণ করবে।

মাছ মজুদোত্তর যত্ন

প্রতিমাসে একবার জাল টেনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। পুকুরে অক্সিজেনের অভাব হলে নতুন পানি সরবরাহ বা বাঁশ পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে পানিতে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরের তলদেশে গ্যাস জমা হলে হররা টেনে পুস্তুর থেকে গ্যাস দূর করা যেতে পারে। ক্ষত যোগের আশঙ্কা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শীতের শুরুতে শতক প্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা যায়।

উৎপাদন

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে মাছ এবং মুরগির সমন্বিত চাষে পুকুরে কোনো সার এবং খাদ্য প্রয়োগ ছাড়াই শতক প্রতি ১৮ থেকে ২১ কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়। খাকি ক্যাম্পেবেল বা ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস বছরে ২৫০-৩০০ টি ডিম দেয়। একটি ব্রয়লার মুরগি ২ মাসে প্রায় ১.৫-২ কেজি ওজনের হয় এবং লেয়ার মুরগি বছরে ২০০-২৫০ টি ডিম দিয়ে থাকে ।

ধানক্ষেতে মাছ ও গলদা চিংড়ি চাষ

ধান চাষের সময় অনেক জমিতেই দীর্ঘদিন পানি ধরে রাখার দরকার হয়। এসব ধানক্ষেত একটু পরিকল্পনা মাফিক তৈরি করে নিলে এক জমিতে এক বছরে ধান আর মাছ এবং গলদা চিংড়ির একাধিক ফসল ফলানো সম্ভব।

বিশেষজ্ঞের বলেছে বাংলাদেশের বর্তমানে ২.০০ লক্ষ হেক্টর জামি ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষের জন্য  উপযোগী তা  এখনই ব্যবহার করা যায়। এবং আরও ৩,০ লক্ষ হেক্টর ধানের জমি ভবিষ্যতে গলানা ও মাছ চাষের জন্য ব্যবহার করা যাবে।

ধানক্ষেতে মাহ ও গলদা চিংড়ি চাষের সুবিধা

একটি জমিতে অনেক ফসল হিসাবে মাছ এবং  গলদা চিংড়ি চাষ হয়। মাছ ধানের  কীট পতঙ্গ ও পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। তাই ধানক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহারের দরকার হয় না। মাছ এবং  চিংড়ির চলাফেরার কারণে ক্ষেতে আগাছা জন্মাতে বাধা সৃষ্টি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে এ পদ্ধতিতে ধানের ফলন গড়ে শতকরা ১৫ ভাগ বৃদ্ধি

জমি নির্বাচন

যেসব জমিতে কমপক্ষে ৪-৬ মাস পানি ধরে রাখা সম্ভব এবং চাষকালীন সময়ে ক্ষেতের সব আংশে কমপক্ষে ১২-১৫ সেমি পানি থাকে সেসব জমিতে ধান এবং মাছ ও গলদার সমন্বিত চাষ সম্ভব। যে সব জমি উঁচু অর্থাৎ পানি ধরে রাখতে পারে না, আবার যে সমস্ত জমি বেশি নিচু অর্থাৎ সহজে প্লাবিত হয় এদের কোনোটিই মাছ চাষের জন্য উপযোগী নয়।

মাছ ও গলদা চাষের জন্য ধানক্ষেত প্রস্তুতকরজমির আইল তৈরি/ মেরামত। জমির আইল শক্ত, মজবুত করে তৈরি বা মেরামত করতে হবে। সাধারণ ই বন্যায় যে পরিমাণ পানি হয় তার চেয়ে ৩০-৬০ সেমি উচু করে আইল তৈরি করা ভালো। আইল পর্যাপ্ত চওড়া হতে হবে। এতে আইল তাড়াতাড়ি ভাঙবে না ও আইলে কিছু শাকসবজিও চাষ করা যাবে।

ধানক্ষেতে ঢোষা ও খাল/নালা খনন

মাছ ও চিংড়ির আশ্রয় ও চলাচলের সুবিধার জন্য ধান ক্ষেতের আইলের চারপাশে ভিতরের দিকে নালা খনন করা হয় অথবা আইলের এক বা দুইপাশে নালা বা ডোবা খনন করা হয়।। আবার অনেকক্ষেত্রে ধান ক্ষেতের মাঝখানে বা কোনায় ডোবা খনন করা হয়।

কোনো ক্ষেত্রে ক্ষেতে নালা এবং ডোবা দুই-ই খনন করেন । সে  জন্য ডোবার সাথে নালার সংযোগ রাখে। মোট জমির ১৫ ভাগ শতকরা জায়গা ডোবা এবং নালা হলেই চলে। এদের গভীরতা ০.৫-০.৮ মিটার হলে ভালো হয়। জমির ঢালু বা নিচু অংশে ডোবা তৈরি করা হয়।
  • ধানক্ষেতে ডোবা ও নালা তৈরির সুবিধা হচ্ছে- (১) ক্ষেতের পানি কমে গেলে বা খুব গরম হয়ে গেলে চিংড়ি
  • ও মাছ গর্ত ও নালার অপেক্ষাকৃত গভীরে ঠান্ডা পানিতে আশ্রয় নিতে পারে। (২) আগাছা পরিষ্কার বা মাছ
  • ধরার প্রয়োজন হলে জমির পানি শুকিয়ে মাছগুলোকে নালা বা ডোবায় এনে তা সহজেই করা যায়।
  • গলদা চিংড়ির আশ্রয়স্থল সৃষ্টি। চিংড়ির জন্য ডোবা বা খালে কৃত্রিম প্লাস্টিক বা শুকনো কঞ্চি দিয়ে গলদার আশ্রয়স্থল তৈরি করতে হবে। চিংড়ি এখানে খোলস বদলের সময় নাজুক অবস্থায় আশ্রয় নিতে পারবে।
  • ধানের জমি তৈরি। জমিতে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে প্রচলিত নিয়মে সার, গোবর ইত্যাদি প্রয়োগ করে। খান রোপণ করতে হবে।
  • খানের জাত নির্বাচন: খানের সাথে মাছ ও চিংড়ি চাষের জন্য বি আর-৩ (বিপ্লব), বি আর-১১ (মুক্তা), বি আর-১৪ (গাজী), বি আর-২ (মালা) ইত্যাদি উচ্চ ফলনশীল ধান নির্বাচন করা উচিত।

ধান রোপণ পদ্ধতি

ধানের চারা সারিবদ্ধভাবে রোপণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ১৫-২০ সেমি রাখতে হবে। পর পর ৫-৬ সারি লাগানোর পর ৩৫-৪০ সেমি ফাঁকা রাখতে হবে। এতে মাছ ও চিংড়ির চলাচলে সুবিধা হয় এবং পানিতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পড়তে পারে ফলে দ্রুত মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হতে পারে।

মাছের প্রজাতির নির্বাচন

যেহেতু ধানক্ষেতে খুব বেশি পানি থাকে না তাই কম পানিতে ও কম অক্সিজেনে বাঁচতে পারে, উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এবং সেইসাথে ধান চাষকালীন সময়ের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয় ।

এরূপ দ্রুত বর্ধনশীল মাছ নির্বাচন করতে হবে, যেমন- কার্ণিও, সরপুঁটি, তেলাপিয়া। তবে এগুলোর সাথে অল্পসংখ্যক তুই, কাতলা দেওয়া যেতে পারে। আবার মাগুর মাছের শোনাও ছাড়া যায়। তবে গ্রাম যাবে না কারণ এরা ধান গাছ খেয়ে ফেলতে পারে ।

পোনা মজুদ

ধান রোপণের ১০-১৫ দিন পর যখন ধান গাছ শক্তভাবে মাটিতে লেগে যাবে তখন চিংড়ি ও প্রতি মাছের পোনা ১৫-২০টি ও চিংড়ির পোনা ৪০-৫০টি মজুদ করা যেতে পারে।

সম্পূরক খাদ্য তৈরি ও প্রয়োগ

চালের কুঁড়া, খৈল, ফিশমিল ১০১:১ অনুপাতে নিয়ে এর সাথে প্রয়োজনীয় পরিমাণ আটা পানিতে ফুটিয়ে আঠালো করে উক্ত উপকরণগুলোর সাথে মিশিয়ে কাই করে ছোট ছোট বল বানিয়ে মাছ ও চিংড়িকে সরবরাহ করতে হবে। প্রতিদিন দেহের ওজনের ৩-৫%ি খাবার তিন ভাগ করে সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় প্রয়োগ করতে হবে।

ব্যবস্থাপনা

ধানের সাথে মাছ চাষ করলে কীটনাশক দেওয়া উচিত নয়। তবে টিনাশক ব্যবহার অত্যাবশ্যক হলে ক্ষেতের পানি কমিয়ে মাছকে ডোবা নালায় কয়ে তা করতে হবে। কীটনাশক ব্যবহারের অন্তত ৫ দিন পর সেচ দিয়ে পুনরায় মাছকে সমস্ত জমিতে চলাচলের সুযোগ করে দিতে হবে। ক্ষেতের পানি কমে গেলে দ্রুত সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। মাছে রোগ বালাই এর লক্ষণ দেখা দিলে মাছগুলোকে ডোবার মধ্যে নিয়ে শতক প্রতি ১ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে।

ধান ও মাছ ও চিংড়ি আহরণ

ধান কাটার সময় হলে ক্ষেতের পানি কমিয়ে চিংড়ি ও মাহগুলোকে নালা বা ডোবায় এনে ধান কাটতে হবে। ধান কাটার পরও যদি ক্ষেতে পানি থাকে যা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে পরবর্তী ফসল শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত মাছ চাষ চালিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url